প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস

দিনক্ষণ মনে নেই, সালটি ছিল ১৯৮৪ ইংরেজী। অজপাড়া গ্রামে আজিয়ারা প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে বিকাল বেলা আমরা কয়জন সম বয়স্ক যুবক একত্রে বসে খোলা মাঠে আড্ডা দিচ্ছিলাম এমন সময় আজিয়ারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জনাব আমির হোসেন (চৌদ্দগ্রাম) এসে আমাদের মধ্যে যোগ দিলেন। কথা প্রসঙ্গে তিনি উপস্থান করলেন অত্র বিদ্যালয় থেকে ৮/১০টি মেয়ে ৫ম শ্রেণী পাস করে বাহির হয়ে যাচ্ছে। তাদের লেখাপড়া এখানেই শেষ। কারণ তাদের পক্ষে বক্সগঞ্জ হাই স্কুল, ঢালুয়া হাই স্কুল অথবা গুণবতী হাই স্কুলে দৈনিক যাতায়াত করে লেখা-পড়া করা সম্ভব নয়। অকালে তাদের জীবন থেকে শিক্ষা মুছে যাচ্ছে। আপনারাই উদ্যোগ গ্রহণ করলে এখানে একটি জুনিয়র হাই স্কুল স্থাপন করতে পারেন। যেহেতু অন্যান্য হাই স্কুল এগুলো এখান থেকে ৫/৬ কিঃ মিঃ দূরে অবস্থান সেহেতু এখানে একটি আপাততঃ জুনিয়র হাই স্কুল স্থাপন করলে অচিরেই এইটি উচ্চ বিদ্যালয় রূপান্তর করা সম্ভব হবে। তাছাড়া আশে-পাশের গ্রামের বিশেষ করে মেয়েদের উচ্চ শিক্ষা লেখা-পড়া করার সুযোগ সৃষ্টি হবে।

তখনই, আমাকে আহ্বায়ক করে আজিয়ারা জুনিয়র হাই স্কুল স্থাপনের জন্য পরিকল্পনা শুরু করা হয়। পরবর্তীতে জনাব ওমর ফারুক ভূঁইয়াকে সভাপতি করে আজিয়ারা ও বাকীহাটির যুবক শ্রেণীর লোকজন দিয়ে সভা-সমাবেশ করে গাছ কাটা আরম্ভ করা হয়। আজিয়ারা, বাকিহাটি, বাগরা, আলিয়ারা, মদনপুর ও শুভপুর থেকে গাছ কাটা হয়েছিল। কোন পরিবার এই ব্যাপারে নিষেধ করেননি।

এই স্কুল স্থাপনার জন্য কেউ গাছ, কেউ অর্থ, কেউ শ্রম দিয়ে সহযোগিতা করেছিলেন। সার্বক্ষণিক যারা শ্রম দিয়ে সহযোগিতা করেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম আজিয়ারার আবু তাহের ভূঁইয়া, আনোয়ার হোসেন ভূঁইয়া, নুর মোহাম্দ ভূঁইয়া, আজিজুল হক, আমির হোসেন, জালাল আহাম্মদ, আব্দুল জলিল, তাজুল ইসলাম, আব্দুর রহমান, আরব মিয়া, মকবুল আহম্মদ, মফিজ এবং বাকী হাটির জালাল আহম্মদ, আব্দুল মতিন, নুরুল হক, শুক্রর আলী, আবু কাজী হুমায়ন কাজী, সাহেব উদ্দিন কাজী, নুরু কাজী, সেখ আহাম্মদ বাঙ্গলী, আবু ইউছুপ, আরোর নাম না জানা অনেকেই।

এদের মধ্যে কেউ কেউ মারা গেছেন। আমরা তাদের রুহের মাগফেরাত আল্লাহর কাছে কামনা করছি। যারা গাছ, অর্থ ও শ্রম দিয়ে সাহায্য সহযোগিতা করেছেন অত্র এলাকাবাসী তাদের আজীবন স্মরণ করবে। অত্র বিদ্যালয়ে বিনা বেতনে সামান্য বেতনে অনেকেই শিক্ষকতা করেছেন। যে দিন শিক্ষক স্কুলে হাজির থাকতো না ঐ দিন আমরা নিজরাই স্কুলের ক্লাস চালিয়ে নিয়েছি।

এই ভাবে আস্তে আস্তে জুনিয়র হাই স্কুল থেকে উচ্চ বিদ্যালয় উপনিত করার জন্য সহযোগিতা করা হয়েছিল। জমির দাতাগণ মরহুম আলহাজ্ব মীর কাশেম ভূঁইয়া, আবুল কালাম আজাদ গং, নুরুল ইসলাম গং। ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। মানুষ ইচ্ছা করলে অসম্ভব কাজকে সম্ভব করতে পারেন। আমি অত্র এলাকার জ্ঞানী, গুণী, শিক্ষানুরাগী, ধর্মীয়বিত্তশালী, শিল্পপতি সকল স্তরের মেহনতি জনগণকে অনুরোধ করছি অত্র এলাকা একটি কলেজ স্থাপন করার উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য।

পরিশেষে, আমি অত্র উচ্চ বিদ্যালয় স্থাপনে সকল স্তরের সহযোগিতাকারীদেরকে অশেষ শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জানিয়ে পরম করুণাময়ের কাছে তাদের শারিরীক সুস্থ্যতা কামনা করছি। প্রাক্তন ও বর্তমান বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি এবং সকল শিক্ষক মন্ডলি বন্ধুকে ধন্যবাদ জানিয়ে আমার বক্তব্য এখানে শেষ করলাম। (খোদা হাফেজ)।

বিনীত নিবেদক-
আবুল কালাম আজাদ (আবু মিয়া)
আজিয়ারা।